About Book:
দুই খণ্ড নিয়ে গঠিত ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমন সমগ্র।অ্যান্টার্কটিকা বাদে বাকি ৬ মহাদেশেই লেখক তাঁর পদচিহ্ন রেখেছেন,একারনে তাঁকে সহজেই ‘বিশ্ব নাগরিক’ উপাধিতে ভূষিত করা যায়।কলকাতায় তাঁর স্থায়ী বাসা না থাকলে বাংলা অভিধানের ভাষায় তাকে স্বচ্ছন্দে যাযাবর বলা যেত।দানিয়ুব নদী কিংবা আড়িয়াল খাঁ নদ,রকি মাউন্টটেন কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত,সুন্দরবন কিংবা মাসাইমারা জঙ্গল সবখানেই ছিল লেখকের উপস্থিতি;শরীরের উত্তাপ দিয়ে নদীকে আর পায়ের ছাপ দিয়ে পর্বত আর বনকে কৃতার্থ করেছেন!!কবি সম্মেলন,আড্ডা কিংবা নিছক ঘোরাঘুরি এগুলোই ছিল তাঁর ভ্রমনের উদ্দেশ্য আর এসব নিয়েই ১২০০ পৃষ্ঠার এই বিশাল বই।সহজপাঠ্য,বর্ণনামূলক এবং তথ্যসমৃদ্ধ হওয়ায় সুনীলের বই সবসময়ই ভালো লাগে।এই বইটিও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।
১২০০ পৃষ্ঠার বিশাল বই কিন্তু কখনো বিরক্তি আসে নি।অবশ্য প্রথম ২৫০ পৃষ্ঠা চিরাচরিত সুনীলকে পায়নি,কাহিনি এবং তথ্যের যে মেলবন্ধন তাঁর লেখায় থাকে সেটা অনুপস্থিত ছিল,তবে এরপর সব ঠিকঠাক।সমগ্রে কিছু ত্রুটি ছিল,যেমন একি গল্প ২-৩ বার,এছাড়া একি ঘটনা এবং উপমার কয়েকবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।তবে সেগুলো খুব একটা সমস্যা করেনি।শেষের অংশটুকু ছিল সবচেয়ে তথ্যবহুল।কাকতালীয় ভাবে আমি বইটা পড়ার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ডকুমেন্টারি “the world at war’ দেখছিলাম যার দরুন কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল,সুনীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে সে মাথাব্যথা অনেকটাই দূর করেছেন।শেষ গল্পটা চমকপ্রদ ছিল;কেন চমকপ্রদ বলছি তা পড়লেই বোধগম্য হবে।শিল্প-সাহিত্যে অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক।নতুন পরিবেশ মানেই নতুন অভিজ্ঞতা যা গল্প কিংবা কবিতার চরিত্র,প্লট,উপমা অথবা শিল্পে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সাহায্য করে।চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখলে শুধু ‘আমিত্ব’ সম্বন্ধে জানা যায়,সাধারন মানুষের চিন্তা-চেতনা,ধ্যান-ধারনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।লেখক কিংবা কবি বলে সুনীলের আজ যত সুনাম তাঁর অধিকাংশই ছিল তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ সেটা এই ভ্রমণকাহিনী পড়লেই উপলব্ধি হয়।